একজন হ্যাকার সাধারণত নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করার জন্য সুসংগঠিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই পরিকল্পনা বিভিন্ন ধাপে বিভক্ত হতে পারে, যার প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট কৌশল এবং পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। হ্যাকিংয়ের উদ্দেশ্য হতে পারে ডেটা চুরি, ডিভাইস বা সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া, পরিষেবাগুলি ব্যাহত করা বা আর্থিক সুবিধা অর্জন করা।
নিচে হ্যাকারদের একটি সাধারণ পরিকল্পনার ধাপ বিশদভাবে বর্ণনা করা হলো:
১. রিকনেসান্স (Reconnaissance):
এটি প্রস্তুতির প্রথম ধাপ, যেখানে হ্যাকার তাদের লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।
কৌশল:
পাবলিক ডোমেইনে থাকা তথ্য (যেমন সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট) বিশ্লেষণ।
টুল ব্যবহার: Nmap, Shodan, Maltego।
লক্ষ্য:
ডোমেইন, IP ঠিকানা, সাবডোমেইন, এবং সফটওয়্যার সংস্করণ শনাক্ত করা।
সিস্টেম বা ব্যক্তির দুর্বলতা চিহ্নিত করা।
২. স্ক্যানিং (Scanning):
এই ধাপে হ্যাকার লক্ষ্যবস্তু সিস্টেমের গঠন এবং দুর্বল পয়েন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য বের করে।
কৌশল:
পোর্ট স্ক্যানিং (Open ports খুঁজে বের করা)।
সেবা (services) এবং অপারেটিং সিস্টেমের সংস্করণ পরীক্ষা করা।
টুলস:
Nmap, Nessus, OpenVAS।
লক্ষ্য:
এক্সপ্লয়েট করার উপযোগী দুর্বলতা খুঁজে বের করা।
৩. এক্সপ্লয়টেশন (Exploitation):
এটি হ্যাকিংয়ের প্রধান ধাপ, যেখানে চিহ্নিত দুর্বলতাগুলি কাজে লাগিয়ে সিস্টেমে প্রবেশের চেষ্টা করা হয়।
কৌশল:
SQL Injection, Cross-Site Scripting (XSS), Remote Code Execution (RCE)।
সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং (যেমন ফিশিং ইমেইল বা ম্যালওয়্যার পাঠানো)।
টুলস:
Metasploit, SQLmap, Burp Suite।
লক্ষ্য:
সিস্টেমে অননুমোদিত অ্যাক্সেস নেওয়া।
৪. অ্যাক্সেস বজায় রাখা (Maintaining Access):
একবার সিস্টেমে প্রবেশ করলে, হ্যাকার নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কিছু কৌশল অবলম্বন করে।
কৌশল:
ব্যাকডোর ইনস্টল করা।
প্রশাসনিক অধিকার (Admin Privileges) অর্জন করা।
সিস্টেম লগ পরিবর্তন বা মুছে ফেলা।
লক্ষ্য:
ভবিষ্যতে সিস্টেমে সহজে প্রবেশ নিশ্চিত করা।
৫. তথ্য চুরি বা ক্ষতিসাধন (Data Exfiltration or Damage):
এই ধাপে হ্যাকার সিস্টেম থেকে ডেটা চুরি করতে বা সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করতে পারে।
কৌশল:
সংবেদনশীল তথ্য ডাউনলোড।
ডেটাবেস মুছে ফেলা বা এনক্রিপ্ট করা (র্যানসমওয়্যার)।
পরিষেবা বন্ধ করা (DDoS আক্রমণ)।
লক্ষ্য:
আক্রমণের উদ্দেশ্য অনুযায়ী ডেটা চুরি, অর্থনৈতিক ক্ষতি বা সেবার ব্যাঘাত ঘটানো।
৬. আড়াল করা (Covering Tracks):
হ্যাকার তাদের কর্মকাণ্ড গোপন রাখার চেষ্টা করে যাতে তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়।
কৌশল:
লগ ফাইল মুছে ফেলা বা পরিবর্তন।
ট্রাফিক এনক্রিপশন ব্যবহার (Tor, VPN)।
পিবটিং (Pivoting) এবং প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার।
লক্ষ্য:
তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করা এবং শনাক্তকরণ এড়ানো।
হ্যাকারের উদ্দেশ্য:
অর্থনৈতিক লাভ: ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করা।
গোপনীয় তথ্য চুরি: ব্যবসায়িক বা ব্যক্তিগত গোপন তথ্য সংগ্রহ।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য: সাইবার গুপ্তচরবৃত্তি বা সাইবার যুদ্ধ।
পরিষেবা ব্যাহত করা: প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির সেবা বন্ধ করা বা সুনাম নষ্ট করা।
ব্যক্তিগত বা প্রতিশোধমূলক উদ্দেশ্য।
সতর্কতা:
এই ধাপগুলো কেবলমাত্র শিক্ষার উদ্দেশ্যে বা সাইবার নিরাপত্তা গবেষণার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। অননুমোদিতভাবে এই কৌশলগুলো প্রয়োগ করা আইনত অপরাধ এবং কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হতে পারে। সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সিস্টেম সুরক্ষিত রাখতে এই জ্ঞান ব্যবহার করুন।
0 Comments
Thans for your comment.